
সন্দ্বীপে যুবদল নেতা আজিজের বিরুদ্ধে বিক্রিত ভূমি পূনঃ দখল নিয়ে নৃশংস নির্যাতনের অভিযোগ
চট্টগ্রাম অফিস
সন্দ্বীপ উপজেলায় যুবদলের সদস্য সচিব আব্দুল আজিজের বিরুদ্ধে জমি দখল, গুন্ডাবাহিনী দিয়ে হামলা সহ নানান অপকর্মের অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগীরা জানান, আজিজ তার রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিক্রিত জমি পূনরায় দখলের চেষ্টায় তাদেরকে হয়রানি ও অমানুষিক নির্যাতন করছেন।
২০০৭ সালে আজিজের বড় ভাই আব্দুল কাদের মোঃ সিরাজুল মাওলা নামক ব্যক্তির কাছে ১,৩৫,০০০ টাকায় সন্দ্বীপের বিএস খতিয়ান নং ১১৩৫ ও বিএস দাগ ৩৪০৬ এবং ৩৪১০ নং জমি স্থানীয় স্বাক্ষীদের মাধ্যমে বিক্রি করেন। কিন্তু সন্দ্বীপে দিন দিন জমির মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায়, কাদের ২০২৪ সালে তার ভাই আব্দুল আজিজকে জমিটি পুনর্দখল করতে বলেন।
আজিজের হুমকি-ধমকি পেয়ে ভুক্তভোগী মোঃ শাহজাহান (ক্রেতা সিরাজুল মাওলার ভাগিনা) বাদী হয়ে কাদের’র বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন (মামলা নং ১৯২/২৪, বিচারাধীন)। মামলার কার্যক্রম বন্ধ করতে এবং জমি পুনর্দখল করতে আজিজ তার রাজনৈতিক প্রভাব ও গুন্ডাবাহিনীর সহায়তায় ভয়ভীতি প্রদর্শন শুরু করেন।
গত (৪ঠা জানুয়ারি) শনিবার সকালে আজিজ দলবল নিয়ে তার বড় ভাইয়ের বিরুদ্ধে চলমান মামলার বাদী মোঃ শাহজাহান এর ভাবি রোজিনা বেগমকে মারধর করেন। রোজিনার চিৎকারে পরিবারের সদস্যরা ছুটে এলে আজিজ নিজেকে আহত দেখিয়ে ছবি তুলে সন্দ্বীপ উপজেলা সহ, চট্টগ্রাম উত্তর জেলার বিভিন্ন নেতৃবৃন্দের কাছে অপ-প্রচার করেন। সেখানে তিনি দাবি করেন, আওয়ামী লীগের সমর্থকরা তাকে মারধর করেছেন।
মূলত পূর্ব থেকে চলমান পারিবারিক জায়গা-সম্পত্তি নিয়ে বিরোধের জের ধরেই আজিজ তার বাহিনী নিয়ে রোজিনার মামা স্বপন, ডাঃ আলাউদ্দিন ও ভাই শিবলী সহ নিরহ, দিনমজুর জসিমের ওপর দফায় দফায় হামলা চালান। পুলিশকে বিভ্রান্ত করতে ভুক্তভোগীদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ক্ষমতার লবিং খাটিয়ে মামলাও দায়ের করেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায়।
ঘটনার প্রথম দফায় আজিজ বিভিন্ন এলাকা থেকে তার গুন্ডা বাহিনি নিয়ে চড়াও হয় রোজিনা, স্বপন, ডাঃ আলাউদ্দিন, শিবলী, নয়ন এবং রেখা’র উপর। আজিজ সহ তার ভাতিজা সাজেদ (পিতা-মুনসুর, ছিদ্দিয়ার বাড়ি), জিহাদ (পিতা- জয়নাল, কাজী বাড়ি),
সাইফুল (পিতা- রফিক, শের আলী বাড়ি), কাজী মনজুর, জয়নাল ( পিতা- কালন),
পারভেজ ( পিতা- হাফিজ, মুরাদের গো বাড়ি), কাজি মাকসুদ ( পিতা- কাজী মাসুক, কাজি আশ্রাফ মেম্বার’র বাড়ি) মিলে অমানুষিক নির্যাতন শেষে উল্লেখিত তিনজন পুরুষকেই সন্দ্বীপ থানা পুলিশে সোপর্দ করেন।
দ্বিতীয় দফায় একই দিন বিকেলে, দিনমজুর মোঃ জসিম ও তার পরিবারের ওপর নির্মম নির্যাতন চালানো হয়। আজিজের নির্দেশে উপরে উল্লেখিত গুন্ডা বাহিনী নতুন করে মোঃ আজিজ প্রকাশ শিবলি (২৯), পিতা-জেবল হক সহ বিভিন্ন ইউনিয়নের অজ্ঞাত প্রায় ২০ জনের একটা গ্রুপ লোহার রড ও দেশীয় অস্ত্র দিয়ে জসিমকে নির্মমভাবে মারধর করে গুরুতর আহত করেন এবং উত্তেজিত জনতা পরিচয়ে জসিমকেও থানায় সোপর্দ করেন। জসিমের অবস্থা গুরুতর দেখে পুলিশি হেফাজতে তাকে স্থানীয় সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য দায়িত্বরত ডাক্তার চট্টগ্রাম মেডিকেলে পাঠানোর জন্য রেফার করেন।
পারিবারিক জায়গা-সম্পত্তি নিয়ে আজিজের রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহারের সম্পর্কে পুরোপুরি অবগত না হয়েই উপজেলা বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম-আহবায়ক ইঞ্জিনিয়ার বেলায়েত হোসেন ফেইসবুকে একটি প্রতিবাদি পোস্ট করেন।
তার অনুকরণে একই ধরনের পোস্ট করেন সন্দ্বীপ উপজেলা বিএনপি’র যুগ্ম আহবায়ক গাজী মুহাম্মদ হানিফ। ফলে সন্দ্বীপ সহ উড়ির চরেও ছড়িয়ে পড়ে রাজনৈতিক সহিংসতা।
তবে স্থানীয়রা জানান, আজিজ ব্যক্তিগত কলহ ও জায়গা-সম্পত্তি দখলের ঘটনাকে রাজনৈতিক মোড়কে ঢেকে দিয়ে দলীয় সহানুভূতি আদায় করতে এসব করেছেন। তার গালে ও নাকে নখের আঁচড়ের ছবি ব্যবহার করে তিনি বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সহানুভূতি আদায়ের চেষ্টায় সাময়িকভাবে সফল হয়েছেন।
সন্দ্বীপ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু তাহেরকে কয়েকবার কল দেওয়া হলেও ফোনে তাকে পাওয়া যায়নি।
উপজেলা বিএনপি’র যুগ্ন আহবায়ক গাজী হানিফ জানান, “এ বিষয়ে আমার সাথে কেউ যোগাযোগ করেনি আমি কিছু জানি না এবং আমি মন্তব্য করতে রাজি না।”
উপজেলা বিএনপি’র সদস্য সচিব আলমগীর হোসেন ঠাকুর জানান, “এই ঘটনার বিষয়ে আমি খবর পেয়েছি কিন্তু এই ঘটনাটি কিসের উপর ভিত্তি করে হয়েছে তা স্পষ্টভাবে জানা নাই।”
যুবদল নেতা আজিজকে ফোন করা হলে তিনি ঘটনার দায় অস্বীকার করেন। তবে মামলা কেন করেছেন এই প্রশ্নের জবাবে ফোন কেটে দেন। পরবর্তীতে তার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে বার বার কল কেটে দেন।
সন্দ্বীপ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনির জানান,
“সন্দ্বীপ উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব আজিজের দায়ের করা মামলায় চারজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে এবং তাদেরকে কোর্টে চালন করা হয়েছে। মামলার এজাহার অনুযায়ী তদন্ত কাজ চলমান আছে।”