
মাহাবুবুর রহমান আবির,কক্সবাজার
টেকনাফ মডেল থানা কর্তৃক ০৩ জন অপহরণ চক্রের সদস্য আটক এবং ভিকটিম হইতে আদায়কৃত মুক্তিপণের নগদ টাকা ও অপহরণকৃত ০২ জন ভিকটিম উদ্ধার।
গত ০২/০৩/২০২৫ ইং তারিখে বাদীনি সুলতানা বেগম (৩৭), পিতা-মৃত আব্দুল হামিদ, স্বামী-মোঃ মাহবুব, স্থায়ী ঠিকানা- সাং-হলিদাবগা, থানা-সোনাতলা, জেলা-বগুড়া, বর্তমান ঠিকানা- সাং-২৬২/১, ইব্রাহিমপুর, থানা-কাফরুল, জেলা-ঢাকা, টেকনাফ মডেল থানায় হাজির হয়ে এজাহার দায়ের করেন। এজাহারে উল্লেখ করা হয় যে, বাদীনির ভাই মোঃ সবুজ প্রকাশ মামুন (৩০), পিতা-আব্দুল হামিদ, মাতা-মৃত পারুল বেগম, সাং-হলিদাবগা, ডাকঘর-ভেলুর পাড়া, থানা-সোনাতলা, জেলা-বগুড়া, এবং বাদীনির ভাতিজা মেহেদী হাসান টিটু (৩০), পিতা-মৃত আহাম্মদ আলী শেখ, মাতা-মোছাঃ মিনি বেগম, সাং-খান্দা ভিআইপি রোড, মালগ্রাম অংশ, থানা-সদর, জেলা-বগুড়া, গত ২৬/০২/২০২৫ ইং তারিখে টেকনাফ থানাধীন হ্নীলা ইউপি এলাকার আব্দুল আমিন নামক এক ব্যক্তির বাড়িতে বেড়াতে আসার জন্য কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করেন।
ভিকটিমদ্বয় একই তারিখ রাত আনুমানিক ১১.৩০ ঘটিকার সময় টেকনাফ থানাধীন হ্নীলা স্টেশনে পৌঁছালে আব্দুল আমিন তাদেরকে তার বাড়িতে না নিয়ে সুকৌশলে রোহিঙ্গা অপহরণকারী চক্রের হাতে হস্তান্তর করে। অপহরণকারী চক্রের সদস্যরা ভিকটিমদ্বয়কে গহীন পাহাড়ে নিয়ে গিয়ে মারধর করে এবং ভিডিও ধারণ করে। উক্ত ভিডিওটি ভিকটিম মোঃ সবুজ প্রকাশ মামুনের স্ত্রীর মোবাইল ফোনে পাঠিয়ে ১০,০০,০০০/- টাকা মুক্তিপণ দাবি করে।
বাদীনির এজাহার প্রাপ্তির পর টেকনাফ মডেল থানায় মামলা নং-০৪/১৪৬, তাং-০২/০৩/২০২৫ইং, ধারা-৩৬৫/৩৮৫/৩৮৬/৩২৩/৫০৬(২)/৩৪ পেনাল কোড রুজু করা হয়। মামলা রুজু হওয়ার পর জনাব মোঃ শাকিল আহমেদ, বিপিএম-সেবা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস্) (পুলিশ সুপার সাময়িক দায়িত্বে), কক্সবাজার মহোদয়ের সার্বিক নির্দেশনায় অফিসার ইনচার্জ, টেকনাফ মডেল থানা, কক্সবাজারের নেতৃত্বে একটি আভিযানিক টিম গঠন করা হয়। উক্ত টিম টেকনাফ থানাধীন হ্নীলা ইউপিস্থ লেদা সাকিনের রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন গহীন পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে অপহৃত ০২ (দুই) জন ভিকটিম, মোঃ সবুজ প্রকাশ মামুন (৩০) ও মেহেদী হাসান টিটু (৩০), কে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। তবে পুলিশের আভিযানিক টিমের উপস্থিতি টের পেয়ে অপহরণ চক্রের সদস্যরা রাতের অন্ধকারে গহীন পাহাড়ে পালিয়ে যায়।
উদ্ধারকৃত ভিকটিম এবং বাদীর প্রদত্ত তথ্যের ভিত্তিতে অপহরণকারীদের বিকাশ ও নগদ এ্যাকাউন্টে প্রেরিত মুক্তিপণের ১,২৫,০০০/- টাকার সূত্র ধরে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় পর্যালোচনা করে টেকনাফ থানাধীন হ্নীলা ইউনিয়নের মৌলভী বাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে অপহরণ চক্রের সক্রিয় ০৩ (তিন) জন সদস্যকে আটক করা হয়। আটককৃত ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন:
১। মোঃ খোরশেদ আলম (৩৫), পিতা-মৃত ইসলাম মিয়া, সাং-মৌলভী বাজার, ২নং ওয়ার্ড, হ্নীলা ইউপি,
২। মোঃ ইউসুফ (৩০), পিতা-মৃত আবুল হোসেন, সাং-নয়াবাজার, ৭নং ওয়ার্ড, হোয়াইক্যং ইউপি,
৩। মোঃ ফয়সাল (১৯), পিতা-নুরুল ইসলাম, সাং-মৌলভী বাজার, মুসলিম পাড়া, ২নং ওয়ার্ড, হ্নীলা ইউপি।
জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে ধৃত আসামী মোঃ খোরশেদ আলম (৩৫) জানায় যে, মুক্তিপণের টাকা আদায়ে ব্যবহৃত মোবাইল ফোন এবং বিভিন্ন সময়ে তাহার সহযোগী অপহরণকারী চক্রের সদস্য কর্তৃক মুক্তিপণ বাবদ আদায়কৃত নগদ ৮,০০,০০০/- টাকা বাহির করে দেয়। এছাড়াও ধৃত ২নং আসামী মোঃ ইউসুফ (৩০) ও ৩নং আসামী মোঃ ফয়সাল (১৯) এর ব্যবহৃত ২টি মোবাইল ফোন প্রাপ্ত হয় এবং বিধি মোতাবেক এসআই (নিরস্ত্র) মাসুম ফরহাদ কর্তৃক জব্দ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
ধৃত আসামীরা আরো স্বীকার করে যে, তারা দীর্ঘদিন ধরে বিকাশ ব্যবসার আড়ালে অপহরণ চক্রের সক্রিয় সদস্য হিসেবে মুক্তিপণের টাকা সংগ্রহ করে নিজেদের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারা করে আসছে। উদ্ধারকৃত ভিকটিম এবং ধৃত আসামীদের বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে এবং পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।