
চট্টগ্রামের ডিসি পার্কে মাসব্যাপী ফুল উৎসব: ২১ দিনে আয় প্রায় ২ কোটি টাকা
মোহাম্মদ জামশেদুল ইসলাম চট্টগ্রাম
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড ফৌজদারহাটে অবস্থিত মনোমুগ্ধকর ডিসি পার্কে মাসব্যাপী ফুল উৎসবের আয়োজন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের একটি অভূতপূর্ব উদ্যোগ। বিশাল ১৯৪ একর জায়গাজুড়ে ১৩৬ প্রজাতির লক্ষাধিক ফুলের সমাহারে পার্কটি যেন প্রকৃতির এক জাদুঘর। দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করতে প্রতিদিনই থাকছে নান্দনিক গ্রামীণ সাংস্কৃতিক আয়োজন। শুরু থেকে ২১ দিনেই আয় হয়েছে প্রায় ২ কোটি টাকা। এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৪ লাখ দর্শনার্থীর উপস্থিতি এই আয়োজনের সফলতাকে নতুন মাত্রা দিয়েছে।
নগরজীবনের যান্ত্রিকতার বাইরে এসে এই আয়োজন যেন প্রকৃতির সান্নিধ্যে নগরবাসীর জন্য নির্মল আনন্দের এক অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা। ফুলের সমারোহে সাজানো পার্কটি দর্শনার্থীদের জন্য হয়ে উঠেছে বিশ্রামের আশ্রয়স্থল। পরিবার, বন্ধু ও শিশুদের নিয়ে প্রতিদিন হাজারো মানুষ ভিড় জমাচ্ছেন ডিসি পার্কে।
জেলা প্রশাসন পুরো আয়োজনটি সাজিয়েছে এমনভাবে, যাতে শুধু ফুল নয়, গ্রামীণ ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির বিভিন্ন দিকও মানুষ উপভোগ করতে পারে। প্রতিদিনের ভিন্ন ভিন্ন সাংস্কৃতিক আয়োজন দর্শনার্থীদের জন্য আনন্দের মাত্রা বাড়িয়ে তুলছে।
পার্কে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরা এই আয়োজন নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। আগ্রাবাদ থেকে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী মাঈনুল ইসলাম বলেন, “ডিসি পার্কের ভাসমান ফুলের বাগান আমাকে মুগ্ধ করেছে। এমন রঙিন ফুলের সমারোহ দেখে মনে হচ্ছে প্রকৃতির সঙ্গে আমি গভীর সংযোগ স্থাপন করেছি। আমার শিশুরাও এই আয়োজন দেখে দারুণ আনন্দিত।”
অন্যদিকে, নগরীর জিইসি এলাকা থেকে আসা গৃহিণী রোকসানা জামান বলেন, “শহরের ভেতরে এমন সুন্দর ও শান্ত পরিবেশ খুবই বিরল। ফুলের মেলা ও সাংস্কৃতিক আয়োজন একসঙ্গে এখানে যোগ করেছে ভিন্ন মাত্রা। পরিবার নিয়ে ঘোরার জন্য এটি এক অসাধারণ জায়গা।”
ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি চিটাগংয়ের (ইউএসটিসি) বায়োকেমিস্ট্রির শিক্ষার্থী কানিজ ফাতিমা আফরিন বলেন, “ডিসি পার্কের মতো এমন ফুলের সমাহার আর কোথাও দেখা যায় না। প্রতিবারই নতুন কিছু যুক্ত হয় যা আরও বেশি আকর্ষণীয় করে তোলে। এবারের ব্যবস্থাপনা ও সাজসজ্জা আগের তুলনায় অনেক উন্নত।”
সরকারি ছুটির দিনগুলোতে দর্শনার্থীদের চাপ স্বাভাবিক দিনের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি। তবে জেলা প্রশাসনের শাটল বাস সেবার কারণে দর্শনার্থীরা সহজেই পার্কে পৌঁছাতে পারছেন, যা আয়োজকদের পরিকল্পনার আরেকটি সফল দিক।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম এই আয়োজনে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে জানান, “ডিসি পার্কের বিশাল এই এলাকা একসময় মাদকসেবীদের দখলে ছিল। আমরা জায়গাটি পুনরুদ্ধার করে এখন এটি নগরবাসীর জন্য একটি নির্মল বিনোদনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করেছি। গত বছর এই উৎসবে প্রায় ৮ লাখ দর্শনার্থী এসেছিলেন। এবার আমরা আশা করছি সেই সংখ্যা ছাড়িয়ে যাবে।”
তিনি আরও বলেন, “ডিসি পার্কে শুধু ফুলের মেলা নয়, সারা বছর নগরবাসীর বিনোদনের জন্য ভিন্ন ভিন্ন আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে। এই পার্ককে আমরা একটি সাংস্কৃতিক ও বিনোদনমূলক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।”
১৩ জানুয়ারি শুরু হওয়া মাসব্যাপী এই উৎসব চলবে আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত পার্কে ভিড় জমাচ্ছেন দর্শনার্থীরা।